Job

সুরক্ষা সেবা বিভাগ (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) || অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক (08-01-2021) || 2021

All Question

‘অপসংস্কৃতি ও বর্তমান যুবসমাজ'

সংস্কৃতি হলো সমগ্র জাতির চিন্তা ধারা, ভাব ধারা ও কর্মধারা গৌরবময় প্রতিচ্ছবি। সংস্কৃতির মূল কথা হল নিজেকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে গড়ে তোলা এবং অপরের নিকট নিজেকে সুন্দরভাবে উপাস্থাপন করা। প্রেম ও সৌন্দর্য সংস্কৃতির প্রধান আশ্রয়। এ আশ্রয় থেকে বিচ্যুত হলে সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যায় এবং মানুষ অপসংস্কৃতির দিকে ধাবিত হয়। শিক্ষা ও সভ্যতার অবনতি ঘটিয়ে যে সংস্কৃতি মানুষকে সুন্দর থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তাই অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতি মানুষকে কলুষিত করে এবং জীবনের সৌন্দর্য বিকাশকে স্তব্ধ করে দিয়ে শ্রী হীনতার দিকে ঠেলে দেয়। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 'কমল হীরের পাথরটাকে বলে বিদ্যে, আর ওর থেকে যা আলোটিকরে পড়ে, তাকে বলি কালচার।' অর্থাৎ সংস্কৃতি সেই আলো যা চেনায় স্বরূপকে।

পরিশীলিত ও পরিশ্রুত জীবনচেতনাই সংস্কৃতি। সংস্কৃতির বিপরীত হল অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতি জাতির এক মানসিক ব্যাধি । এটি অসুন্দরের ছদ্মবেশ। এর স্পর্শে মানুষের মন কলুষিত হয়। পরিশীলিত, মার্জিত ও উন্নতবোধের হয় অপমৃত্যু। আমাদের সংস্কৃতি আমাদের জীবনচেতনা ৷ গভীর অর্থে ‘সংস্কৃতি' হচ্ছে পরিশীলিত জীবনবোধ। অপর দিকে অমঙ্গল, অকল্যাণের সাধনাই অপসংস্কৃতির সাধনা । উনিশ শতকে বাংলার পাশ্চাত্য সংস্কৃতি উদ্দাম ভোগ-বিলাসিতা ও উচ্ছ্বলতার জন্ম দেয়। বর্তমান বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার অবাধ সুযোগ আমাদের জাতীয় জীবনে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বর্তমানে আমাদের দেশে সংস্কৃতির অবক্ষয় বা অপসংস্কৃতি দিনে দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বর্তমান যুবসমাজে অবক্ষয়ের কারন মূল্যবোধের অভাব ।

বর্তমান সমাজ এ সকল মূল্যবোধের অনুশীলন ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। আর যুবসমাজের অবক্ষয়ের পেছনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে অপসংস্কৃতি। সাহিত্যের নামে কুরুচিপূর্ণ কিছু রচনা বাজার ছেয়ে ফেলেছে। এ প্রসঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, ‘রহমানে শয়তানে যে তফাত, আঙুরে ও শরাবে যে তফাত, মুক্তি ও বন্ধনে যে তফাত, আসল সাহিত্য ও এই নকল সাহিত্যে সেই তফাত। হায়! অবোধ পাঠক জানে না সাইরেনের বাঁশরির সুরের ন্যায় এই অসাহিত্য তাকে ধ্বংসের দিকে পলে পলে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। জাতির সমস্ত যৌব-শক্তি এই অপসাহিত্য জোঁকের মতো নিঃসাড়ে চুষে নিচ্ছে। প্রতিদিন সংবাদ পত্র আমাদের সামনে যে চালচিত্র তুলে ধরে তাতে অপসংস্কৃতি আগ্রাসন অতি স্পষ্ট। অশ্লীলতা, নোংরামি, খুন, ছিনতাই, প্রতারণা সবই অপসংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন নাম ।

আমাদের সমাজ আজ এসবেরই দাসত্ব করে চলছে। তাছাড়া বর্তমান সমাজে ধর্মের নামে লোক-দেখানো কিছু আচার- অনুষ্ঠানের প্রাধান্য লক্ষ্যের চেয়ে উপলক্ষকে বড় করে তুলেছে। এছাড়া, শিক্ষার নামে কুশিক্ষা, সমাজ-সেবার নামে দালালি, সঙ্গীতের নামে সঙ্গীতহীন কতক হৈচৈ এবং বেশভূষার নামে হাস্যকর কিছু অনুকৃতি সাংস্কৃতিক জীবন গ্লানি ও মিথ্যাচারকে পুঞ্জীভূত করছে। বিদেশি সংস্কৃতিকে আমরা এক বাক্যে অপসংস্কৃতি বলে আখ্যায়িত করি। আসলে কথাটা সর্বাংশে ঠিক না। বিদেশের সবকিছু আমাদের জন্যে অপসংস্কৃতি, তা নয়। তবে বিদেশের কিছু গ্রহণ করার আগে দেখতে হবে তা আমাদের জীবন সুন্দর বা উন্নতি করছে কি না, আমাদের চেতনা কিংবা মহান করছে কি না। যা আমাদের জীবনবোধকে পরিশীলিত করে তা অপসংস্কৃতি নয়। কিন্তু আমরা যদি ডিসকো, গান, নাচ, পাশ্চাত্য মডেলের পোশাকের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি তা হলে সেটা স্বাভাবিকভাবেই অপসংস্কৃতি হবে। এমন কি পাশ্চাত্যের পোশাকের জের ধরে অনেক আত্নহনন পযর্ন্ত ঘটে যায় । এটি কী সংস্কৃতির অন্তরায়? এ অপসংস্কৃতি আমাদের যুবসমাজকে গ্রাস করে ফেলছে। সমাজবিজ্ঞানী E. B. Taylor বলেন, “Cultural perversion might lead the youth generation to contamination and destruction'. আজকের তরুণরাই দেশের আগামী দিনের অমূল্য সম্পদ। তারা দেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু অপসংস্কৃতি তাদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তারা এমন কিছু বিষয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে যা জীবনকে সুন্দর করে বিকাশের ক্ষেত্রে মোটেই সহায়ক নয়।

বলতে দ্বিধা নেই যে, আমাদের দেশে যে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে তার মূলে রয়েছে দুর্নীতি। যে সমাজে দুর্নীতি আছে সে সমাজ থেকে নিজস্ব সংস্কৃতি আশাকরা যায় না। তাই অপসংস্কৃতি আজ সংস্কৃতির আসন দখল করে নিয়েছে। যেমনঃ আজকাল অনেক তরুণকে মেয়েদের মতো হাতে বালা বা পিতলের কড়া এবং এক কানে দুল পড়তে দেখা যায়। আবার মেয়েদের অনেক সময় ছেলেদের মত শার্ট, টাইট জিন্স-প্যান্ট, চুলের বয়-কাট। এসব আনন্দ হলেও এটা কিন্তু অপসংস্কৃতির নামান্তর। আমাদের তরুণ সমাজ আজ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যে যুবসমাজ দেশ ও জাতির অফুরন্ত প্রাণশক্তি, তার কর্মপ্রেরণা, তার অগ্রগতি, সেই যুবসমাজের এক গরিষ্ঠ-অংশই। 

আজ অপসংস্কৃতি-কবলিত। উদ্দেশ্য, দেশের এই সবুজপ্রাণ যুব শক্তির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া। তলিয়ে যাচ্ছে নানারকম নেশার সামগ্রীর মধ্যে। অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে নানাবিধ মাদকশ্রয়ী ওষুধ ও সুরাপানে।

যুবসমাজের এই অপসংস্কৃতি-প্রিয়তা সুস্থসমাজ বিনির্মাণে বিরাট অন্তরায়। এটি বিনষ্ট করে জাতীয়-ঐক্য। গ্রাস করে মহৎ- মানসিকতা। সমাজ থেকে অপসংস্কৃতির প্রাদুর্ভাব দূর করতে হলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে প্রথমে সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষিত শ্রেণির দায়িত্ব অনেক বেশি। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে সচেতন করতে হবে। নিষিদ্ধ করতে হবে অপসংস্কৃতির বেসাতি। তাদের অনুপ্রাণিত করতে হবে নতুন মূল্যবোধে । সুযোগ দিতে হবে আত্মবিকাশের। তাই আজ যারা অপসংস্কৃতির বেড়াজালে আটকে গিয়ে অলস তন্দ্রায় আচ্ছন্ন, সঠিক পথনির্দেশনা পেলে এই যুবসমাজই আবার উজ্জীবিত হবে দুর্মর প্রাণশক্তি ফিরে পাবে তার হারানো শুভবুদ্ধি। আবার তাদের প্রার্থনামন্ত্র হবে 'নবজীবনের গাহিয়া গান / সজীব করিব মহাশ্মশান'। সর্বশেষে বলতে চাই যে, সংস্কৃতি প্রতিটি জাতির জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যদি তা অপসংস্কৃতি না হয়। অপসংস্কৃতি জীবনকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তাই অপসংস্কৃতি যাতে সমাজকে কলুষিত করতে না পারে সে জন্য রাষ্ট্রপরিচালকদের যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি সচেতন হতে হবে সর্বশ্রেণির নাগরিকদের, তাহলেই একটি সুন্দর ও সুস্থ সমাজ, দেশ, জাতি গড়ে উঠতে পারে। নৈতিক শিক্ষাই পারে অপসংস্কৃতিকে রুখতে। আসুন আমরা সুস্থ্য ধারার সংস্কৃতি চর্চা করি ।

9 months ago

অগ্নিশর্মা (অত্যন্ত রেগে যাওয়া): যেখানে সেখানে অত অগ্নিশর্মা হলে কপালে দুর্ভোগ আছে, জেনে রেখ ।

9 months ago

কংস-মামা (নির্মম আত্মীয়): কংস-মামার হাতে যখন পড়েছ, তখন তোমার কপালের দুর্ভোগ ঠেকাবে কে?

9 months ago

ঘাটের মড়া (মৃত্যু আসন্ন যার/ অকর্মণ্য বৃদ্ধ): ওই ঘাটের মড়ার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে ঠিক করলে ।

9 months ago